• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বুনো শুয়োরের তান্ডবে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৩ মে ২০২৩

বদিউজ্জামান রাজাবাবু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তারাপুর ও ঠুঁঠাপাড়া গ্রামে সন্ধ্যা হলেই সীমান্ত পেরিয়ে দলবেঁধে আসে ভারতীয় বুনো শুয়োরের দল। রাতভর নষ্ট করছে মাঠে থাকা ধান, গম, ভুট্টা, পাটসহ বিভিন্ন ফসল।
ভোরে দিনের আলো ফোটার আগেই সীমান্ত পেরিয়ে আবারও নিরাপদ স্থানে ফিরে যায় বুনো শুয়োরের দল। ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহারা দিলেও তেমনটা লাভ হচ্ছে না। উলটো রাতে পাহারা দিতে গিয়ে বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।
বর্তমানে বুনো শুয়োরের আতঙ্কে দিন পার করছেন মনকষা ইউনিয়নের ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের মাঠে থাকা প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। উপায় না পেয়ে অনেকেই কাঁচা ধান কাটছেন। এমনকি কাটা ধান না শুকানোর আগেই তড়িঘড়ি করে ঘরে তুলছেন তারা। কৃষকদের দাবি, বুনো শুয়োরের অত্যাচারে ফলন কমেছে ব্যাপক হারে। এতে লোকসানের ঝুঁকি বেড়েছে অনেক।
কৃষক, শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর ধরে বুনো শুয়োরের অবাধ চলাচল থাকলেও চলতি বছরে এই পশুর আক্রমণ বেড়েছে ব্যাপক হারে। দৈনিক ২০-৩০টি শুয়োরের একেকটি দল সারারাতে ফসলের মাঠে চরে বেড়ায়। এতে ধান, গম, ভুট্টা ঝরে পড়ছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাতে পাহারা দিতে গিয়ে বিজিবি-বিএসএফের মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বলেন, দিনে কখনও বুনো শুয়োর দেখতে পাওয়া যায় না। সন্ধ্যা হলেই ২০-৩০টি বুনো শুয়োর দলবেঁধে সীমান্ত পেরিয়ে ফসলের মাঠে আসে। সারারাত থেকে আবারও ফজরের সময় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। বাধ্য হয়েই আমার দুই বিঘা জমিতে থাকা কাঁচা ধান কেটেছি। কারণ একবার যে জমির উপর দিয়ে শুয়োরের দল যায়, তা নষ্ট হয়ে যায়। সমস্ত ফলন ঝরে পড়ে। ধান কাটার পর শুকানোর জন্যও জমিতে রাখা যায় না। কেননা কাটা ধানের উপর দিয়ে গেলে ফসল আরও বেশি নষ্ট হয়।
কৃষক আব্দুর রাকিব বলেন, এখনও মাঠজুড়ে ধানের আবাদ রয়েছে। ধানগুলো জমিতেই মাড়াই করে দিচ্ছে বুনো শুয়োরের দল। একেকটা বুনো শুয়োরের ওজন ৮০-১০০ কেজি। যে ফসলের উপর দিয়ে ছোটাছুটি করে, সেখানকার সব শেষ করে দেয়। ধান ছাড়াও গম ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এই দুটি ফসল তাদের পছন্দের খাবার। কিন্তু ধান কখনও খায় না। তবে বিশালদেহী শুয়োর ছোটাছুটি করার ফলে ধানের ফলন ঝরে যায়।
শ্রমিক তাইজুল ইসলাম বলেন, ফসল নষ্ট হতে থাকায় আমরা গ্রামের প্রায় হাজারখানেক লোক এক রাতে মাঠে এসেছিলাম। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজনকেও ডেকেছিলাম, যারা বুনো শুয়োরের মাংস খায়। সেদিন রাতে কারেন্ট দিয়ে দুটি বুনো শুয়োর মারা হয়। এরপরও তাদের আক্রমণের পরিমাণ একটুও কমেনি।
কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতের অন্ধকারে পাহারা দেওয়াটাও নিরাপদ নয়। কারণ কয়েক গজ দূরত্বে জিরো লাইন। ওপারে বিএসএফ, এপারে বিজিবি। রাতের অন্ধকারে পাহারা দিতে এলেও নানা রকম হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দ্বারা। ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের দুইজন কৃষক বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি এই বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হয়েছেন বিএসএফ সদস্যরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হওয়া এক যুবক বলেন, বুনো শুয়োর তাড়াতে গেলে আমার উপরই আক্রমণ করে। পিঠে, হাতে, পায়ে কামড় দেয়। আমি ছোটার জন্য তীব্র চেষ্টা করলে গড়াগড়ি খেতে খেতে জীবন বাঁচাতে পাশে থাকা একটি পুকুরে ঝাঁপ দেয়। এরপর আশপাশে থাকা কৃষকরা এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকা তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা রয়েছে। কিন্তু বুনো শুয়োর থাকা এলাকাটি ভারতীয় সীমানার মধ্যে। জঙ্গল ও নদীর ধারে হওয়ায় সেখানে কোনো তারের বেড়া নেই। ফলে অবাধে বুনো শুয়োরের দল চলাফেরা করতে পারে। সেখানে আনুমানিক শতাধিক বুনো শুয়োর রয়েছে।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমিতে ভারতীয় বুনো শুয়োরের আক্রমণের বিষয়টি স্থানীয় কৃষকরা আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা বন বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করেছি। স্থানীয়ভাবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। আশা করি, বন বিভাগ এ বিষয়ে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত জানান, রাজশাহীতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয় রয়েছে। বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করা হয়েছিল। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষক ও তাদের চাষাবাদ করা ফসলের নিরাপত্তা দিতে এবং নিরাপদে ফসল ঘরে তুলতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশা করি, খুব শিগগিরই এর সমাধান হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads